বুধবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুই ছেলে ও ছেলের বউয়ের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব বয়সী হালিমা খাতুন নামের এক মা। সন্তানদের হাতে মারধরের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে গেলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন দুই ছেলে ও ছেলের বউ। এরই প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এই অসহায় মা।
রবিবার দুপুরে তেঁতুলিয়া জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে দুই ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি। নির্যাতিত ওই মায়ের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামে।
হালিমা খাতুন বলেন, ‘আমার মেজো ছেলে আব্দুল হামিদ (৩৮), ছোট ছেলে হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৩৫) ও হামিদের স্ত্রী জান্নাত (৩০) দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। তারা বিভিন্নভাবে আমার ওপর মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এলাকার মানুষকে মাদকের বিষয়টি জানালে এবং অভিভাবক হিসেবে মাদক সেবন পরিহার করতে বলায় তারা আমার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। মানসিক নির্যাতন চালায়। গত সপ্তাহে আমার বড় বউমা ফাহমিদা আক্তারের মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসার আমার মাদকাসক্ত দুই ছেলে ও হামিদের স্ত্রী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। গালিগালাজের কারণ জানতে চাইলে তারা ধারালো ছোরা দিয়ে আমাকে মাথায় আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপরেও মেজো ছেলের বউ জান্নাত আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এ সুযোগে আমার ঘরে ঢুকে ট্রাংকের তালা ভেঙে জমি বিক্রির ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আমার ও বড় বউমার স্বর্ণ-গহনা নিয়ে যায়। আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে এলে তাদেরও হুমকি প্রদর্শন করে। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই থানায় অভিযোগ করতে হয়েছে। আমার মতো যেন কোনো অসহায় মা এরকম পরিস্থিতিতে না পড়েন। থানায় অভিযোগ করলেও এখনো মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমি থানায় কিংবা আদালতে যেতে পরছি না। মামলার কথা শুনলেই তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এই মা আরও বলেন, ‘২৯ বছর আগে আমার স্বামী তিন পুত্র ও ১ মেয়ে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অতি কষ্টে দিনাতিপাত করে সন্তানদের লালন-পালন করেছি। তারা বড় হয়ে এখন আর আমার খোঁজ-খবর নেয় না। কী খাই-না খাই, কোনো খবর না নিয়ে বরঞ্চ দীর্ঘদিন ধরেই দুই ছেলের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি।’
পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসীর আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলনে তার বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম ও বড় বউমা মাহমুদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘হামিদ ও হাবিব প্রায়ই আমাদের রক্তচক্ষু দেখিয়ে আসছে। তারা মাদকাসক্ত। বাড়ির ঘরের সিঁড়ির কাজ করলে তারা বাধা দেয়, আর সিঁড়িটি ভেঙে দেয়। তাতে প্রতিবাদ করলে তারা আমার মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করলে কেটে যায়। দু’তিনটি সেলাই করা হয়েছে।’
বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো থাকি বাইরে। ইতোমধ্যে জমি বিক্রি করে ঘর নির্মাণ করছি। ওই দুই ভাইয়ের সবচেয়ে বেশি উপকার আমি করেছি। কিন্তু তারা মাকে মারল, আমার স্ত্রীকেও ছাড়ল না। পরিবারে ভাইদের হাতে এভাবে বারবার নির্যাতন অসহনীয়, ন্যায় বিচার চাচ্ছি।’
Leave a Reply