মাসুদুর রহমান – জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বাসি ও নিম্নমানের খাবার খেয়ে নারী ও শিশু এবং বৃদ্ধাসহ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে ৪৩ জন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সরিষাবাড়ী হাসপাতাল থেকে ২৮ রোগীকে ছুটি প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় পঞ্চপীর এলাকায় জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে । যত্রতত্র গড়ে উঠা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা স্টল ও খাবার হোটেল গুলো প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার(৭ জুন)সকালে পঞ্চপীর বাজার মোড়ে মৃত আবুল হোসেন এর ছেলে লালু মিয়ার চা স্টলে হোটেলের মত ডাল রুটি বিক্রি করে। সেই বাসি ও নিম্নমানের ডাল রুটি খাওয়ার পর থেকেই লোকজন অসুস্থ্যতা বোধ শুরু করে এবং দুপুর থেকে পর্যায়ক্রমে রাত পর্যন্ত ৪৩ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়। বাউশী পঞ্চপীর ও ফুলবাড়ীয়া এবং চন্দনপুর এলাকার অসুস্থরা হলেন – ১।মোঃ আঃ আজিজ(৬০) পিতা- মোঃ মমতাজ শেখ ২। ফাতেমা (৬৩) স্বামী- মোঃ আঃ সালাম ৩। লাল ভানু(২৫) স্বামী- জহুরুল ৪।হোসনে আরা (৩০) স্বামী- আঃ রহিম, ৫। ইয়ানুছ (৫৩) পিতা – ওয়াছিন আলী,৬। মনির (২৬) পিতা – খুর্শেদ ৭। মোঃ শাহজাহান(৪৮) পিতা- গুলজার হোসেন ৮। মোঃ স্বাধীন (১০) পিতা – শাহজাহান ৯। জাকির হোসেন (৩২) পিতা- মতিউর রহমান ১০। রাতুল(৫) পিতা- বিল্লাল ১১। মার্জিয়া(২) ১২। তামিম(৬) ১৩। মিষ্টি(৮) পিতা- মুক্তার হোসেন ১৪। রিয়া (৮) পিতা – শফিকুল ১৫। সাব্বির হোসেন (৯) পিতা- সোলায়মান ১৬। জুবাইর(১০) পিতা- জাকির ১৭। আলম(৪০) পিতা- গুলজার ১৮। বিদ্যুৎ (১০) পিতা- আলম ১৯। আঃ হক (৬৫) পিতা-মৃত গণি ২০। জুনাইদ (৩) ২১। রবিউল (৩৫) পিতা- আলা উদ্দিন ২২। জারিফ (৪) পিতা- মণির উদ্দিন ২৩। সুরুজ (৭০) পিতা – মকবুল ২৪। সুলতান (৫০) পিতা- মৃত হবি ২৫। মোঃ আঃ ছামাদ খান(৬৫) পিতা- মৃত জাবু খান ২৬। মজনু (৫৬) পিতা – মফিজ মিয়া ২৭। ইচ্ছা (৮) পিতা- খবির ২৮। সিয়াম(৮) পিতা- মোরাদ ২৯। আজিজুল (১৬) পিতা- লাল মিয়া ৩০। সিরাজ (৩২) পিতা- আঃ সালাম ৩১। লাল মিয়া(৪২) পিতা- আবুল শেখ ৩২। জামিনুর(১০) পিতা- নুরুল ইসলাম ৩৩। রাকিব(১৩) পিতা- ময়ান ৩৪। ফাহাদ (১৪) পিতা-হাসান ৩৫। ফরিদ (৪০) পিতা- মৃত আলাউদ্দিন ৩৬। তারা মিয়া (৫৫) পিতা- মৃত মনির উদ্দিন ৩৭। আশরাফ ফারুকী (৩০) পিতা- মৃত লতিফ সরকার ৩৮। ফারুক(৩৫) পিতা- হায়দার সরকার ৩৯। রিয়াদ(৭) পিতা- ওয়াজেদ ৪০। ছবুরা (৬০) পিতা- আঃ মান্নান ৪১। সুরুজ (৬৫) পিতা- মৃত তনু ৪২। সৈয়দ (৭০) পিতা- মারুফ(দাদা) ৪৩। ইসমাইল (৪০) পিতা- আলা উদ্দিন।
গুরুতর রোগীদেরকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও প্রায় ১০ জন প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সরিষাবাড়ী হাসপাতাল থেকে ২৮ রোগীকে ছুটি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সাহেদুর রহমান ।
পঞ্চপীরের সালাম জানান, লালু মিয়ার হোটেল খুবই অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা। সে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরী করে এবং পরিবেশন করে। তাকে এব্যাপারে এলাকাবাসী ইতোপূর্বেও সতর্ক করেছে কিন্তু সে কারো কোন কথাই শুনেনা বরং উল্টো নানান কথা শুনিয়ে দেয় এলাকাবাসীকে। আমরা যত্রতত্র গড়ে উঠা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা স্টল ও খাবার হোটেল গুলো প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফুল ইসলাম জানান, আমার ডিউটি সময়কালে বমি, পাতলা পায়খানা ও জর এবং পেটে ব্যথা নিয়ে ৪৩ জন রোগী এসেছিল । পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা রোগীদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে নিয়েছি৷
মঙ্গলবার দুপুরে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সাহেদুর রহমান জানান, ২৮ জন রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে ৷ বাকীদের চিকিৎসা দিচ্ছি আমরা।
রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিহাব উদ্দিন আহমেদ জানান,সবার শারিরীক অবস্থা উন্নতির দিকে।জেলা নিরাপদ খাদ্য ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ও খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। দায়ী হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারেও প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে।
Leave a Reply