বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১১:২৪ অপরাহ্ন
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলাচল সীমিত থাকার কারণে যানবাহনের চাপ বাড়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। শুক্রবার থেকে যানবাহনের চাপ ভয়াবহ বৃদ্ধি পায়। সাড়ে তিন হাজার যানবাহনের স্থানে তিন ফেরির বৃদ্ধিতে ১০ হাজার যানবাহন পারাপারে সহযোগিতা করতে হয় পুলিশকে। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ সদস্যদের। সাধারণ যাত্রীরা বলতে থাকেন ফেরিঘাটে বিপর্যয় ঘটেছে। তবে এই বিপর্যয় সামাল দিতে কাজ করে গেছেন রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সদস্যরা।
পাংশা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য হিসাবে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসেন ২৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার)। ৫০ বছর বয়সী এই পুলিশ সদস্যের ভাগ্যে স্বজনদের সাথে ঈদ উৎযাপন করা হয়নি। আজ সোমবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফোর লেনের প্রবেশপথে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এই পুলিশ সদসস্যের। তিনি বলেন, এসপি স্যার বলেছেন আমাদের পেশার মধ্যেই সবচেয়ে বড় আনন্দ। স্যারের কথায় প্রচণ্ড গরমে ক্লানিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নির্দেশনা ছিল কোন পরিবহন যেন সিরিয়াল ভঙ্গ করে সামনের দিকে না যেতে পারে। সেই চেষ্টা করেছি। স্যার আমাদের খোঁজ রেখেছেন। এই আমাদের তৃপ্তি।
জয়দেব বিশ্বাস ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হিসাবে জেলা পুলিশে কর্মরত। দায়িত্ব পালন করছিলেন জমিদার ব্রিজ এলাকায়। যানবাহনের চাপে ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে (প্রাইভেটকার) গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ফেরিঘাটে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের এই সদস্য। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার সময় কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খেয়ে নেই ভাই! তিনি বলেন, যানবাহনের ভয়াবহ চাপ। সেই চাপ সামাল দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি ১৫ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে এসপি স্যারের নির্দেশে কাজ করছি। মহাসড়ক সচল রাখতে আমরা কাজ করে সফল হয়েছি।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের ঈদগুলোতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা গেছে। কিন্তু এবারের ঈদে কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। দুই ঘাটের যানবাহনের চাপ এক ঘাটে এসে পড়ছে। যে কারণে ভোগান্তি হয়েছে। তবে এই ভোগান্তি রোধে পুলিশ সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। দৌলতদিয়া প্রান্তে আরও দুইটি ঘাট বেশি থাকলে ফেরি লোড-আনলোডে সুবিধা হতো। তখন ভোগান্তি আরও হ্রাস পেতো।
বাস চালকেরা বলেন, ভোগান্তি হয়েছে একথা সঠিক। তবে দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কোন বিশৃঙ্খলা ছিলো না। রাজবাড়ী প্রান্তে কোন গাড়ি সিরিয়াল ভেঙে সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফোরলেনের ৯টি অবৈধ প্রবেশপথ এই এসপি স্যার আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এটিতে ভোগান্তি অনেক হ্রাস পেয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, এবার দৌলতদিয়া প্রান্তে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিলো এক লেন দিয়ে সিরিয়ালে যানবাহন ফেরিঘাটে প্রবেশ করানো। অন্য লেন দিয়ে যানবাহনগুলোকে বের করে দেওয়া। সেই জায়গায় আমার পুলিশ সদস্যরা ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি যখন তাদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। তাদের চোখের ভাষা বলেছে মানবিক পুলিশের পেশাদারিত্ব দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আর হয়তো এই ঘাটে কোলাহল থাকবে না। গাড়ি চালকদের সচেতন ও নিয়ম মানার জন্য অনুরোধ করেন জেলা পুলিশের এক কর্ণধার।
Leave a Reply