বৃহস্পতিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র মনির উদ্দিনের নির্দেশে পিয়ন দিয়ে যানবাহন থেকে অবৈধ ভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পৌর এলাকার একেকদিন একেক স্থানে দীর্ঘ ৫ মাস ধরে নিয়মবহির্ভূতভাবে টোল আদায়ের নামে চলছে চাঁদাবাজি। টোল আদায়ের কারণে প্রায়ই টোল আদায়কারীদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের বাগ্বিতণ্ডা ঘটনাও ঘটছে। এতে সময় কেটে যায় ২০-৩০ মিনিট। এ সময়ে যানজট লেগে যায়। টোল আদায়ের কারণে পরিবহণ শ্রমিক ও মালিকদের এবং অটো চালক, ফাইটার, নসিমন চালকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে ।উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পৌরসভার সামনে টোল/চাঁদা আদায় কার্যক্রম চললেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন নজরধারী।টোল/চাঁদাবাজি বন্ধে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান ও জামালপুর জেলা ও সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বর্তমান সরকারে সু-দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন এবং যানবাহন চালকরা।
জানা গেছে,দেশের সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ এলাকার সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহন থেকে টোল আদায় না করতে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা জারি করে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।টোল আদায় বন্ধ না হলে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের নামে টার্মিনালের বাইরে দেশের বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বাস, ট্রাকসহ যন্ত্রচালিত সব পরিবহন থেকে টোল (চাঁদা) আদায় বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান ও রুল জারি করে হাইকোর্ট ।টার্মিনাল ছাড়া টেন্ডার হয়না। আর টেন্ডার ছাড়া টোল আদায় করা যায় না।পৌরসভা বিধানের ৯৮ ধারার ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধুমাত্র পৌর মেয়রের নির্মিত টার্মিনাল ছাড়া পার্কিং ফির নামে টোল আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ।
মেয়র মনির উদ্দিন কোন নির্দেশনা না মেনেই দিগপাইত-তারাকান্দি-সরিষাবাড়ী প্রধান সড়কে চলাচলকারী পৌরসভার সামনে আবার কখনো ট্রাক পরিবহন মোড় কখনো আবার বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোটেম্পু, অটোরিকশা,অটোবাইক. সিএনজি, ট্রলি, জেএসএ, নছিমন, করিমন, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও মালবাহী ট্রাক গতিরোধ করে ফির রশিদ দিয়ে ১০ টাকা, ২০টাকা ও ৫০টাকা টোলের নামে প্রতি মাসে প্রায় ৩/৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত টোল থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা আদায় হলেও একাউন্টে ১৫০০/২ হাজার টাকা জমা হয় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এছাড়াও উল্লেখ্য যে, উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন সহ প্রায় ৭/৮ হাজার অটোবাইক আছে বলে জানা যায়।বিভিন্ন জায়গা থেকে অটোরিক্সা,অটোবাইক ও অটোভ্যান আসলেই তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স বাবদ ২ হাজার ৫০ টাকা ও অটো ভ্যান থেকে লাইসেন্সের নামে ১ হাজার ১শ টাকা করে নিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনার ঝড়।পৌর এলাকার অটো রিক্সা চালক মো: সুমন বলেন, এক বছরের জন্য লাইসেন্স বাবদ ২ হাজার ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
হাজীপুর গ্রামের নছিমন ড্রাইভার আক্তার ও মাদারগঞ্জের মালবাহী ট্রাক ড্রাইভার বিপ্লব , জামালপুরের টেম্পু চালক জামাল,তারাকান্দির ট্রাক চালক বাবুসহ আরোও অনেকে জানান, বিভিন্ন যানবাহন থেকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার সামনে টোলের নামে পৌর এলাকা দিয়ে চলাচল কারী ছোট-বড় সকল যানবাহন হতে টোল আদায় করা হচ্ছে। আর এখানে কোন যানবাহন পার্কিং করে না। তারপরও সরিষাবাড়ী পৌরসভার সামনে সহ একেকদিন একেক জায়গা থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রশিদের মাধ্যমে টোল নেওয়ার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রতি নিয়ত ড্রাইভার ও সাধারণ যাত্রীদের সাথে দূর্ব্যবহার করছে এমনকি যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চাঁদা আদায়ের জন্য স্টীলের লাঠি নিয়ে বেশ কয়েক জন লোক সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
কয়েকজন ট্রাক মালিকরা বলছেন, টোল আদায়ের আগে রাস্তাগুলো টোল নেওয়ার মতো উন্নত করা হোক।
বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সরিষাবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন,পৌরসভার সামনে থেকে অটোবাইক থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে বলে অটোবাইক ড্রাইভারেরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে ।শুক্রবার সকালে আরামনগর বাজার ট্রাক পরিবহন মোড়ে টোল আদায়ের সময় সরিষাবাড়ী পৌরসভার পিয়ন সুরুজ ও রফিকুল ইসলাম বলেন,মেয়রের নির্দেশে আমরা টোল আদায় করতাছি। মেয়র সাথে কথা বলুন আপনারা। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, বড় বড় সাংবাদিকরাই যা করেছে, আপনারা আর কি করতে পারবেন?পৌরসভার প্যানেল মেয়র হক তরফদার বলেন, ট্যাস্ক আদায় করেই পৌরসভার খরচ বহন করতে হবে এটার জন্যই নতুন করে আদায় করা শুরু হয়েছে।পৌর এলাকার রাস্তাটি টোল আদায়ের মত রাস্তা কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো বলেন, আমরা মুলত অটো চালকদের লাইসেন্সের জন্য চাপ দিতেছি। পৌর ভিতরে যারা আছে তারা লাইসেন্স করুক।জামালপুরে ৪০০০ টাকা লাইসেন্স হওয়ায় সরিষাবাড়ী পৌরসভায় ২০০০ টাকা ও ফরম ৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র মনির উদ্দিন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে বলেন, টোল আদায় করার বিষয়টি আমাদের পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত। কত আয় হয় আমরা ২ মাস দেখে লিজ দিয়ে দিব। জামালপুর ৪০০০ টাকা অটো লাইসেন্স, সেই তুলনায় আমরা অনেক কম ধরেছি। ২০০০ টাকা লাইসেন্স ও ৫০ টাকা ফরম।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করিলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply